সূরা কুরাইশ এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা কুরাইশ এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর 

আরবি উচ্চারন বাংলায় অনেক সময় ভুল থাকে।তাই আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি, যখন বাংলায় উচ্চারন শিখবেন তখন অবশ্যই আরবির সাথে মিলিয়ে নিবেন। আর যদি কেউ আরবি দেখে পড়তে না পারেন তাহলে অবশ্যই অডিও শোনে বাংলার সাথে মিলিয়ে নিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
لِاِیۡلٰفِ قُرَیۡشٍ ۙ﴿۱﴾ اٖلٰفِہِمۡ رِحۡلَۃَ الشِّتَآءِ وَ الصَّیۡفِ ۚ﴿۲﴾ فَلۡیَعۡبُدُوۡا رَبَّ ہٰذَا الۡبَیۡتِ ۙ﴿۳﴾ الَّذِیۡۤ اَطۡعَمَہُمۡ مِّنۡ جُوۡعٍ ۬ۙ وَّ اٰمَنَہُمۡ مِّنۡ خَوۡفٍ ٪﴿۴﴾

বাংলা উচ্চারণঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
লিঈলা ফি কুরাইশিন। ঈলা ফিহিম রিহলাতাশ শিতা-ইয়ি অছছাইফ। ফালইয়া'বুদু রাব্বাহা যাল বাইত। আল্লাযী আত্ব'আমাহুম মিন জু'ই ওয়া আমানাহুম মিন খাওফ।

বাংলা অর্থঃ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
যেহেতু কুরাইশরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে, শীত ও গ্রীষ্মকালে সফরের অভ্যাসে, সুতরাং তাদের উচিত এ ঘরের (কা'বা) রবের ইবাদত করা, যিনি ক্ষুধায় তাদেরকে আহার দান করেছেন, ভয়-ভীতি হতে নিরাপদে রেখেছেন।

তাফসীরঃ

আয়াতঃ ১
কোরাইশরা ছিলো আরবের এক সম্ভ্রান্ত গোত্র। এই গোত্রেই বিশ্ব নবীর জন্ম হয়। পবিত্র কাবা ঘরের তত্বাবধায়ক হিসেবে কোরাইশরা ছিলো আরবের অন্যান্য গোত্রের নিকট অত্যন্ত সম্মানীয়। আরবের প্রধান তীর্থস্থান কাবার অবস্থানের জন্য কোরাইশরা ত্রিবিধ সুবিধা ভোগ করতো :

১ ) তারা সকল গোত্রের সম্মানের পাত্র ছিলো।

২) মক্কার অবস্থান ছিলো আরবের কেন্দ্রভূমিতে। এই অবস্থানের জন্য তারা অন্যান্য দেশের সাথে ব্যবসার সুবিধা লাভ করতো। যার ফলে এখানে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটে এবং কোরাইশরা উপকৃত হয় এবং বিভিন্ন দেশের নিকট সম্মানীয় গোত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

৩) আরবের রীতি অনুযায়ী প্রাচীনকাল থেকে মক্কার সীমান্তের মাঝে সকল প্রকার যুদ্ধ -বিগ্রহ, ব্যক্তিগত দ্বন্দ ইত্যাদি নিষিদ্ধ যা আরবের সকল গোত্রই মেনে চলতো। সুতারাং কোরাইশরা নিরাপত্তা ভোগ করতো। অন্যের দ্বারা আক্রমণের কোন ভয় তাদের থাকতো না। যে সব সম্মান ও সুবিধা তারা কাবা ঘরের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ভোগ করতো, তার পরিবর্তে তাদের আল্লাহ্‌র কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত ছিলো। তাদের কি উচিত নয় যে, তারা আল্লাহ্‌র একত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহ্‌ তাঁর রাসুলের মাধ্যমে যে প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছেন তাতে মনোযোগী হবে ?

সে যুগে বিশ্ব জুড়ে ছিলো মানুষের জন্য নিরাপত্তার অভাব। সেই যুগে কাবা ঘরের তত্বাবধায়ক হিসেবে তারা প্রতিবেশী সকল গোত্র এবং সিরিয়া, পারস্য, ইয়েমেন ইত্যাদি দেশের শাসকদের নিকট থেকে নিরাপত্তা ভোগ করতো। কোরাইশরা কাবার খাদেম থাকার ফলে সকলেরই শ্রদ্ধার পাত্র ছিলো। তাদের আমদানী রফতানী কাজে কেহই বাঁধা প্রদান করতো না।

আয়াতঃ ২
কোরাইশরা ছিলো ব্যবসায়ী, তাদের ব্যবসার কাফেলা শীতকালে ইয়েমেনের উষ্ণ অঞ্চলে এবং গরম কালে সিরিয়ার ঠান্ডা স্থানে গমন করতো। কোরাইশদের বাণিজ্য উপলক্ষে সারা বৎসরই ভ্রমণ করতে হতো। যার ফলে তারা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষার সংস্পর্শে আসার সুযোগ লাভ করে এবং তাদের ভাষাকে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর করার সুযোগ পায়।

আয়াতঃ ৩
‘গৃহ' দ্বারা এখানে কাবা শরীফকে বুঝানো হয়েছে। ‘গৃহের মালিক’ হচ্ছেন আল্লাহ্‌ স্বয়ং।

আয়াতঃ ৪
বিভিন্ন স্থান থেকে লোক মক্কাতে আগমন করতো এবং কোরাইশরা ব্যবসায়ী হিসেবে সুনাম থাকাতে এ উপলক্ষে মক্কাতে ব্যবসার প্রসার ঘটে। যদিও মক্কা একটি ঊষর এলাকা কিন্তু বাণিজ্যের মাধ্যমে তারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করতো। এ ভাবেই আল্লাহ্‌ তাদের ক্ষুধার আহার দেন।

মক্কাতে কাবার অবস্থানের জন্য কোরাইশরা অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ভোগ করতো। কারণ মক্কার সীমান্তে যুদ্ধ বিগ্রহ, ধর্মীয় ভাবে নিষিদ্ধ ছিলো। ব্যক্তিগত দ্বন্দ ও প্রতিশোধ গ্রহণ ছিলো নিষিদ্ধ। ধর্মীয় অনুভূতির কারণে এ নিষেধাজ্ঞা সকলই মেনে চলতো। এভাবেই তারা নিরাপত্তা ভোগ করতো।

Comments

Popular posts from this blog

সূরা আল ইখলাস

সূরা হুমাযাহ এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা ক্বদর এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর