সূরা ইখলাছ এর আরবি, বাংলা উচ্চচারন, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা ইখলাছ এর আরবি, বাংলা উচ্চচারন, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর 
আরবি উচ্চারন বাংলায় অনেক সময় ভুল থাকে।তাই আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি, যখন বাংলায় উচ্চারন শিখবেন তখন অবশ্যই আরবির সাথে মিলিয়ে নিবেন। আর যদি কেউ আরবি দেখে পড়তে না পারেন তাহলে অবশ্যই অডিও শোনে বাংলার সাথে মিলিয়ে নিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
قُلۡ ہُوَ اللّٰہُ اَحَدٌ ۚ﴿۱﴾ اَللّٰہُ الصَّمَدُ ۚ﴿۲﴾ لَمۡ یَلِدۡ ۬ۙ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ ۙ﴿۳﴾ وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّہٗ کُفُوًا اَحَدٌ ٪﴿۴﴾

বাংলা উচ্চারণঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ। আল্লা হুচ্ছামাদ। লাম ইয়ালিদ অলাম ইয়ুলাদ। অলাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।

বাংলা অর্থঃ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
(হে মুহাম্মদ!) আপনি বলে দিন, আল্লাহ এক, আল্লাহ কারোমুখাপেক্ষী নন, তিনি কাউকে জন্মও দেন নি, আর তিনি জন্ম প্রাপ্তও নন। আর তাঁর সমতুল্যও কেউ নেই।

তাফসীরঃ

আয়াতঃ ১
আল্লাহ্‌র গুণাবলীর বৈশিষ্ট্য অল্প কয়েকটি কথার মাধ্যমে এই সূরাতে তুলে ধরা হয়েছে, যেনো আমরা তা বুঝতে পারি। এই সূরাতে বিশেষ ভাবে আল্লাহ্‌র কয়েকটি গুণাবলীর উল্লেখ করা হয়েছে, সাধারণ ভাবে মানুষ যে সব বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়।

প্রথমতঃ বলা হয়েছে যে প্রকৃতিগত ভাবে আল্লাহ্‌ মহান, যে মহত্ব আমাদের মত সাধারণ মানুষের ধারণারও বাইরে। নিরাকার আল্লাহ্‌র ধারণা হচ্ছে তিনি একক সত্ত্বা। তিনি আমাদের খুব কাছে থাকেন ও আমাদের সদয় তত্বাবধান করেন। আমাদের অস্তিত্বের জন্য আমরা আল্লাহ্‌র কাছে ঋণী।

দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্‌ এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ্‌ই একমাত্র এবাদতের যোগ্য। সৃষ্টির আর কিছুই এবাদতের যোগ্য নয়।

তৃতীয়তঃ আল্লাহ্‌ অসীম অনন্ত এক সত্ত্বা যিনি কারও উপরে নির্ভরশীল নন বরং বিশ্বভুবনের সকলেই তাঁর করুণার উপরে নির্ভরশীল;

চতুর্থতঃ আল্লাহ্‌ এমন এক সত্ত্বা যিনি একক বৈশিষ্ট্যে মহিমান্বিত। তিনি কারও পিতা নন, কেউ তাঁর পুত্র নয়। যদি থাকতো তাহলে আল্লাহ্‌র মাঝে মানবিক বা প্রাণীর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকতো। কিন্তু আল্লাহ্‌ এসব থেকে পূত ও পবিত্র।

পঞ্চমতঃ বিশ্ব ভূবনের এমন কিছু নাই যাকে আল্লাহ্‌র সাথে তুলনা করা যায়। আল্লাহ্‌র গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য অতুনীয়।

আল্লাহ্‌র একত্ব ও অদ্বিতীয় ধারণা বহু ঈশ্বরবাদের ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। বহু ঈশ্বর বাদের ধারণাতে মানুষ বিশ্বাস করে বহু দেব-দেবতায় যাদের বিভিন্ন ধরণের শক্তি বিদ্যমান। এই আয়াত দ্বারা সেই ধারণাকে সমূলে ধ্বংস করা হয়েছে।

আয়াতঃ ২
‘সামাদ’ এই শব্দটির অর্থ এক কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। শব্দটি দ্বারা দ্বিবিধ ভাব প্রকাশ করা হয় :

১) আল্লাহ্‌র অস্তিত্বই একমাত্র সত্য, এবং চিরস্থায়ী, আর সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী।

২) আল্লাহ্‌ কারও উপরে নির্ভরশীল নন, বরং বিশ্বভূবনের সকল কিছুই তাঁর উপরে নির্ভরশীল।

আয়াতঃ ৩
এই আয়াত দ্বারা খৃষ্টবাদের ‘পিতা-পুত্র ‘ ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। খৃষ্টবাদে আল্লাহ্‌র গুণাবলীতে প্রাণী সুলভ প্রবৃত্তি আরোপ করা হয়েছে ‘পিতা-পুত্র ‘ সম্পর্কের দ্বারা। এই আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ্‌ অনুরূপ অপবিত্রতা থেকে মুক্ত।

আয়াতঃ ৪
এই একটি লাইনে সকল যুক্তিকে সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়েছে। আমাদের সাবধান করা হয়েছে মানুষের সাধারণ প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে। সাধারণতঃ মানুষ নিজস্ব ধ্যান ধারণার বাইরে চিন্তা করতে ভালোবাসে না। সে কারণে মানুষ আল্লাহ্‌র গুণাবলীকেও মানুষের গুণাবলীর মোড়কে মুড়িয়ে দেখতে ভালোবাসে। সকল যুগেই দেখা যায় মানুষের এই প্রতারণামূলক অভ্যাস যে, মানুষ এবাদতের ব্যাপারে উপাস্য দেব-দেবীকে মানুষের তুল্য গুণাবলীতে ভূষিত দেখতে চায়। মানুষের এই প্রবণতাকে কঠোর ভাষাতে নিন্দা করা হয়েছে যে, মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ্‌র সাথে তুলনীয় বিশ্বভূবনে কিছুই নাই। তিনি অতুলনীয়।

Comments

Popular posts from this blog

সূরা হুমাযাহ এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা ক্বদর এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা আল ইখলাস