মোনাজাতের দোয়া
মোনাজাতের দোয়া
يْ اُمَامَةَ قَالَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَيُّ الدُّعَاءِ اَسْمَعٌ قَالَ جَوْفُ الَّيْلِ الْاَخِرِ وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوْبَاتِ – ترمذي
অর্থঃ একদিন নবিজীকে জিজ্ঞাসা করা হল ইয়া রাসুল্লাহ! কোন দোয়া দ্রুত কবুল হয়? নবীজি বললেন, রাতের শেষ অংশের এবং ফরজ নামাজের পরের দোয়া। (অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর-সুন্নাতের পরে দোয়া এবং সুন্নাত না থাকা ফরজের পরের দোয়া)
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা নিম্নহাদীস দ্বারা প্রদান করা হয়ঃ
عَنْ عَاءِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا سَلّمَ لَمْ يَقْعُدْ اِلَّا مِقْدَار مَايَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَام تَبَارَكْتَ يَاذَالْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ – مسلم
অর্থঃ মা আয়েশা (রাঃ)বলেন নবিজী সালাম ফিরাইবার পর এই দোয়া পড়া পরিমান সময়ের অধিক বসতেন না। “আল্লাহ্হুমা আনতাম সালামু ওয়া মিনকাছ সালাম তাবারাকতা ইয়া জালজালালী ওয়াল ইকরাম (হে আল্লাহ তুমি শান্তিময় এবং তোমার নিকট হইতেই যাবতীয় শান্তি আসে তুমি বরকতময় হে প্রতাপ সম্মানের অধিকারী)”। (মুসলিম)
যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে সেই সকল ফরজের পর নবিজী সংক্ষেপে এই দোয়াই করতেন এবং যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নাই, সেই সকল ফরজের পর অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ দোয়া করতেন । তবে যদি মাসবুক নামাজী না থাকত। মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এই হাদিসেরই অনুসরন করতেন ।
হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রাঃ)বলেছেন, একটি মাকরুহ তানজিহ হতে (ছোট মাকরুহ কাজ হতে) আত্মরক্ষা করাও বছরের পর বছর ধরে নফল নামাজ, যিকির এবাদত, দোয়া, মোনাজাত হতে শত শত গুণে শ্রেষ্ঠ ফজিলতপূর্ণ । তাই ফরজ নামাজের পর সুন্নত নামাজ থাকলে দেরীতে সুন্নাত আদায় করা এমন মাকরুহ্ কাজ হতে বিরত থাকা উল্লেখিত ফজিলতের অধিকারী এবং বড়ই সৌভাগ্যের শামীল ।
যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ নামাজ রয়েছে যথাঃ জোহর, মাগরিব, এশা এবং জুমা এই সকল ফরজ নামাজের পর সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করা সুন্নাত। কারণ মুনাজাত মুস্তাহাব; তাই মুস্তাহাব আদায় করতে গিয়ে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামাজ বিলম্বে আদায় করা মাকরুহ
- মাজাহেরে হক ১ম খন্ড, পৃষ্টা- ৩০৮
সমস্ত ফরজ নামাজের পরই দোয়া করা নবী (সাঃ) এর তরীকা ও সুন্নত। কিন্তু ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ থাকলে সেই স্থলে যথা- জোহর, মাগরিব, এশা ও জুমা নামাজের পর মুনাজাত সংক্ষিপ্ত করা উচিত
- জখিরাতুজ জাফর ৫০ পৃষ্ঠা
উক্ত নামাজ সমূহের পরে লম্বা মুনাজাত করা মাকরুহ তানজিহী।
- মুনিয়া এবং গায়াতুল আওতার
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-
عَنْ عَاءِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّي صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَقْعُدْ اِلَّا مِقْدَار مَايَقُوْلُ اَللَّهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَام تَبَارَكْتَ يَاذَالْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ – مسلم شريف مسكوة شريف
মা আয়েশা (রাঃ)হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম (সাঃ)নামাজের সালাম ফেরানোর পর “আল্লাহম্মা আনতাস সালামু ও মিনকাস্ সালাম তাবারকতা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম” এ দোয়া পড়া সময়ের অধিক বসতেন না বা দেরী করতেন না
- মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজাহ্, আবু দাউদ এবং মেশকাত শরীফ
উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা মানাবী (রঃ) বলেন-
لَمْ يَقْعُدْ اِلَّا مِقْدَار مَايَقُوْلُ – الخ اَيْ بَيْنَ الْفَرضِ وَالسُّنَّةِ
অর্থঃ এই পরিমাণ দোয়া পড়া পর্যন্ত বসতেন অর্থাৎ এই দোয়া পড়তেন ফরজের পর এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদার পূর্বে -এলাউস্ সুন্নান, আজীজী
উক্ত নামাজ সমূহের পর দোয়া পড়ার পরিমাণ ব্যক্ত হয়েছে; যে সকল ফরজ নামাজের পরে সুন্নাত নামাজ রয়েছে এরূপ স্থলে নবীজী (সঃ)সাধরণতঃ এরূপ কোন সংক্ষিপ্ত দোয়াই করতেন। ইমাম আজম আবু হানীফা (রঃ)এ মতেরই অনুসরণ করতেন
- মেশকাত, মাজাহেরে হক
আর যে সকল ফরজ নামাজের পরে সুন্নাত নামাজ নাই যথাঃ ফজর, এবং আছরের নামাজ- এ স্থলে যতটুকু ইচ্ছা মুনাজাত লম্বা করা যাবে।
وَفِي الْحُجّةِ الْاِمَامُ اِذَا فَرِغَ مِنَ الظُهْرِ وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ يَشْرَعُ فِيْ الْسُنَّةِ وَلَايَشْغِلُ بِاَدْعِيَةٍ طَوِيْلَةٍ – (كذافي التاتارخانيه – عالمغيري جلداول)
অর্থঃ কিতাবুল হুজ্জাতে উল্লেখ আছে, ইমাম সাহেব যখন জোহর, মাগরিব এবং এশার নামাজ শেষ করবেন, তখন সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে সুন্নাত নামাজ শুরু করবেন। মুনাজাত দীর্ঘ/লম্বা করবেন না
- অনুরূপ তাতার খানিয়া, ফতওয়ারে আলগিরী ১ম জিঃ পৃঃ ৭৭
আশরাফ আলী থানবী (রঃ)এর বেহেস্তী জেওর উর্দ্দু কেতাব পৃষ্টা- ২৩ দেখুন ।
جن فراءض كى بعد سنتين هين انكي بعد دعاء مختصر كرنا هين زياده تاخير كرنا مكروه هين (كذافي الدرالمختار- شامي- تاتارخانيه –منيةالمصلي )
অর্থঃ যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ রয়েছে (যেমন- জোহর, মাগরিব, এশা)- যেগুলোর পর সংক্ষিপ্ত দোয়া করতে হয়। দীর্ঘ সময় কাটানো মাকরুহ্।
- যেরূপ আছে দুররুল মুখতার, শামী, তাতার খানিয়া, মুনিয়াতুল মুসল্লীতে
ইমাম সাহেব নামাজ শেষ করে ডানে বামে অথবা মুক্তাদীগনের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসবে এবং মুনাজাত করবে, তবে শর্ত হল কোন মাছবুক নামাজী যেন সামনে প্রথম কাতরে না থাকে ।
- আশ্রাফী বেহেস্তী জেওর- ১১ জিঃ পৃঃ ৩৩
جن فراءض كي بعد سنتين هين ان كي بعد دعاء مختصر هونا منا سب اور افضل هين زياده تاخير كرنا مكروه هين (كذافي الدر المختار – شامي – تاتارخانيه – منية المصلي –احسن الفتاوي)
অর্থঃ যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে (জোহর, মাগরিব, এশা) তাদের পর সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করা উচিত এবং উত্তম। (সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ আদায় করতে) বেশী বিলম্ব করা মাকরুহ ।
- অনুরূপ দুররুল মুখতার, শামী তাতার খানিয়াহ, মুনিয়া, আলমগিরী কিতাবে আছে; আহসানুল ফতওয়া ১ম জিঃ পৃঃ ৩৪৬
কোন কিতাবে দেখা যায় প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তিনবার আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লাইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহে, আয়াতুলকুর্ছি, এখলাছ, ফালাক, নাছ এক একবার এবং ৩৩ বার সুব্হানাল্লাহ ৩৪ বার আলহামদুল্লিলাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া মোস্তাহাব। তবে যে ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে এগুলো সুন্নাতের পরে পড়াই মোস্তাহাব এবং উত্তম ।
- মারাকি, বেহেস্তিজিওর-পৃঃ ১৫৩
যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নাত নামাজ আছে, সেক্ষেত্রে আমল, অজীফা, তাছবীহ, তাহ্লীল সমূহ সুন্নাত নামাজ আদায় করার পর পড়তে হবে। এটাই উত্তম
- মারাকী, বেহেস্তি জেওয়র ২য় খন্ড পৃঃ ১৫৩
جن فراءض كي بعد سنتين هين انكي بعد امام اور مقتد يان مختصر دعاء كر سنتين ادا كري (فتاوي دار العلوم ديو بند جلد سوم )
অর্থঃ যে সকল ফরজ নামাজের পর সুন্নত নামাজ আছে সে সকল নামাজের পরে ইমাম এবং মুক্তাদীগণ সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে সুন্নাত আদায় করবে
- ফতওয়ায়ে দারুল উলুমদেওবন্দ ২য় জিঃ পৃঃ ১৯৭
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَيُّ الدُّعَاءِ اَسْمَعٌ قَالَ جَوْفُ الَّيْلِ الْاٰخِرِ وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوْبَاتِ ترمذي شريف-مشكوة شريف-
আবু উমাম (রঃ) বলেন একদিন নবীজিকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলাল্লাহ্ কোন্ দোয়া দ্রুত কবুল হয়? নবীজি বলেন শেষ রাতের এবং ফরজ নামাজের পরের দোয়া এ হাদীসের ব্যাখ্যা মা আয়শার হাদীসে উল্লেখ হয়েছে যে, ফরজের পর সংক্ষেপ মুনাজাত করে সুন্নাতের পর মুনাজাত লম্বা করার কথা। তবে যে ফরজ নামাজের পর সূন্নাত নেই সেক্ষেত্রে দীর্ঘ মুনাজাত করতে দোষ নেই।
আবি উমামার হাদীস মতে। ফরজ নামাজের পর দোয়া কবুল হওয়ার অর্থ ফরজ – সূন্নাত নামাজের পর। অর্থাৎ ফরজের পর সুন্নতে মোয়াকদাহ নামাজ থাকলে সেক্ষেত্রে সংক্ষেপ মুনাজত করে সুন্নাত নামাজ আদায়ের পর যত ইচ্ছা মুনাজাত করা যাবে।
- বেহেস্তি জিওর
Comments
Post a Comment