সূরা লাহাব এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা লাহাব এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

আরবি উচ্চারন বাংলায় অনেক সময় ভুল থাকে।তাই আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি, যখন বাংলায় উচ্চারন শিখবেন তখন অবশ্যই আরবির সাথে মিলিয়ে নিবেন। আর যদি কেউ আরবি দেখে পড়তে না পারেন তাহলে অবশ্যই অডিও শোনে বাংলার সাথে মিলিয়ে নিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
تَبَّتۡ یَدَاۤ اَبِیۡ لَہَبٍ وَّ تَبَّ ؕ﴿۱﴾ مَاۤ اَغۡنٰی عَنۡہُ مَالُہٗ وَ مَا کَسَبَ ؕ﴿۲﴾ سَیَصۡلٰی نَارًا ذَاتَ لَہَبٍ ۚ﴿ۖ۳﴾ وَّ امۡرَاَتُہٗ ؕ حَمَّالَۃَ الۡحَطَبِ ۚ﴿۴﴾ فِیۡ جِیۡدِہَا حَبۡلٌ مِّنۡ مَّسَدٍ ٪﴿۵﴾

বাংলা উচ্চারণঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
তাব্বাত ইয়াদা আবী লাহাবিও অয়াতাব্বা। মা আগনা 'আনহু মা-লুহু অমা কাসাব সাইয়াছলা নারান যা-তা লাহাবিও। অমরায়াতুহু হাম্মা লাতাল হাতাব। ফী জ্বীদিহা হাবলুম মিম মাসাদ।

বাংলা অর্থঃ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
ধ্বংস হোক, আবু লাহাবের দুই হাত, আর সে নিজেও ধ্বংস হোক। তার ধন ও উপার্জন কোন কাজে আসবে না। শীঘ্রই সে অগ্নির লেলিহান শিখায় জ্বলবে। তার স্ত্রীও, যে কাষ্ঠ বহনকারিণী। তার গলায় থাকবে পাকানো রশি।

তাফসীরঃ


আয়াতঃ ১

‘আবু লাহাব’ যার অর্থ ‘আগুনের শিখা ‘ – আবু লাহাবের আসল নাম ছিলো আব্দুল উয়যা। আবু লাহাব ছিলো তার ডাক নাম। তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) পিতৃব্য। এই নামটি তিনি লাভ করেন তার প্রচন্ড আগুনের মত মেজাজ ও উজ্জ্বল গাত্রবর্ণের জন্য। সে ছিলো শিশু ইসলামের এক চরম শত্রু। যখন মহানবী কোরাইশ গোত্রের সকলকে এবং তাঁর নিজের আত্মীয়-স্বজনদের এক আল্লাহ্‌র প্রতি এবাদতের প্রতি আহ্বান করলেন, মানুষের কৃতকর্মের পরিণাম ও পাপ সম্বন্ধে সতর্ক করলেন, আবু লাহাব রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে রাসুলকে (সাঃ) অভিসম্পাত দিলেন। ইংরেজীতে প্রবাদ আছে যে, “The Causeless curse will not come.” আবু লাহাবের অন্ধ আক্রোশ থেকে উচ্চারিত অভিশম্পাত বাণী কোনও দিনও সত্যে পরিণত হয় নাই। ইসলামের উদীয়মান সূর্য্য দিনে দিনে আরও ভাস্বর ও প্রখর হতে থাকলো এবং যারা ইসলামের প্রচারে প্রচন্ড শত্রুতা করেছিলো,তাদের শক্তি ও ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। এদের মধ্যে অনেকেই বদর যুদ্ধে নিহত হয়। আবু লাহাব বদরের যুদ্ধের কিছুদিন পরে মহামারীতে ভীষণ দুরবস্থার মাঝে মারা যায়।
এই আয়াতে ‘হাতের’ উল্লেখ আছে। মানুষের সব কাজে হাতের প্রভাবই বেশী, তাই এখানে ব্যক্তি সত্ত্বাকে হাত বলেই ব্যক্ত করে দেয়া হয়। আবু লাহাবের মৃত্যু ছিলো অত্যন্ত করুণ। তিনি মহামারীতে আক্রান্ত হন ফলে সংক্রামণের ভয়ে তার আত্মীয়-স্বজনেরা তাকে নির্জন প্রান্তরে রেখে আসে। সেখানে তিনি অসহায় ও করুণ মৃত্যু বরণ করেন। তার ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি কোনও কাজেই আসে নাই। ধন -সম্পদ ও সন্তান -সন্ততি ছিলো আবু লাহাবের অহংকার ও গর্বের বিষয়বস্তু। ৩নং আয়াতে ভবিষ্যত বাণী করা হয়েছে যে, পৃথিবীর জীবনের শেষ পরিণতি সম্বন্ধে।


আয়াতঃ ২, ৩, ৪ ও ৫

আবু লাহাবের ন্যায় তার স্ত্রীও রাসুলুল্লাহ্‌র প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ছিলো। সে এ ব্যাপারে স্বামীকে সাহায্য করতো। সে খেজুরের পাতা দ্বারা রজ্জু পাকিয়ে তা দিয়ে খেজুর কাঁটার বান্ডিল তৈরী করে রাতের আঁধারে তা বয়ে এনে রাসুলের যাত্রা পথে বিছিয়ে রাখতো যেনো তা রাসুলকে আহত করে। জ্বালানী কাঠ বহন করা বাক্যটি প্রতীকধর্মী। এর দ্বারা আবু লাহাবের স্ত্রীর চরিত্রের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরা হয়েছে। সে ছিলো দুষ্টু প্রকৃতির ; মানুষের মাঝে বিবাদ বিসংবাদের সৃষ্টি করা ছিলো তার স্বাভাবিক ধর্ম। রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীদের কষ্ট দেয়ার জন্য আবু লাহাব পত্নী নিন্দাকার্যের সাথেও জড়িত ছিলো যাতে বিবাদ, বিসংবাদের সৃষ্টি হয়। তার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকেই ‘ইন্ধন’ বা জ্বালানী কাঠ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটা ছিলো তার অন্যতম পাপ। এর দ্বারা অন্য আর এক রকমের আগুন ও অন্য আর এক রকমের দড়ি দ্বারা সে বেষ্টিত হয়েছে। আগুনটি হবে তার পরলোকের শাস্তি এবং দড়ি বা পাকানো রজ্জুটি হচ্ছে পাপের দাসত্ব করার প্রবণতা। কারণ প্রতিটি পাপ কাজই আত্মাকে হীনতা ও নীচতার ডোরে বেধে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত সে তার আত্মার স্বাধীনতা হারায় ও পাপের ক্রীতদাসে পরিণত হয়। এ ভাবেই পাপীরা তাদের শেষ পরিণতিকে নির্ধারিত করে নেয়। এটাই হচ্ছে এই সূরার নৈতিক উপদেশ।

Comments

Popular posts from this blog

সূরা হুমাযাহ এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা ক্বদর এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা আল ইখলাস