সূরা তাকাছুর এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা তাকাছুর এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর 


আরবি উচ্চারন বাংলায় অনেক সময় ভুল থাকে।তাই আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি, যখন বাংলায় উচ্চারন শিখবেন তখন অবশ্যই আরবির সাথে মিলিয়ে নিবেন। আর যদি কেউ আরবি দেখে পড়তে না পারেন তাহলে অবশ্যই অডিও শোনে বাংলার সাথে মিলিয়ে নিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
اَلۡہٰکُمُ التَّکَاثُرُ ۙ﴿۱﴾ حَتّٰی زُرۡتُمُ الۡمَقَابِرَ ؕ﴿۲﴾ کَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ۙ﴿۳﴾ ثُمَّ کَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ؕ﴿۴﴾ کَلَّا لَوۡ تَعۡلَمُوۡنَ عِلۡمَ الۡیَقِیۡنِ ؕ﴿۵﴾ لَتَرَوُنَّ الۡجَحِیۡمَ ۙ﴿۶﴾ ثُمَّ لَتَرَوُنَّہَا عَیۡنَ الۡیَقِیۡنِ ۙ﴿۷﴾ ثُمَّ لَتُسۡـَٔلُنَّ یَوۡمَئِذٍ عَنِ النَّعِیۡمِ ٪﴿۸﴾

বাংলা উচ্চারণঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আলহাকু মুত্তাকা ছুরু হাত্তা যুরতুমুল মাকাবির। কাল্লা সাওফা তা'লামুনা ছুম্মা কাল্লা সাওফা তা'লামুন। কাল্লা লাও তা'লামুনা ইলমাল ইয়াক্বীন। লাতারা য়ুন্নাল জাহীম। ছুম্মা লাতারা য়ুন্নাহা আইনাল ইয়াক্বীন। ছুম্মা লাতুসয়ালুন্না ইয়াওমায়িযিন আনিন্নাঈ'ম।

বাংলা অর্থঃ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
তোমাদেরকে প্রাচুর্যের লালসা ভুলিয়ে রাখে। কবরে যাওয়া পর্যন্ত। না, শীঘ্রই তোমরা জানবে। আবারও বলছি, না শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। কখনই নয়, যদি তোমরা নিশ্চত জানতে। তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে, তারপর, তোমরা তা চাক্ষুষ দর্শন করবে। পরে সেদিন তোমরা অবশ্যই নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।

তাফসীরঃ

আয়াতঃ ১
ধন-সম্পদ,ক্ষমতা, প্রভাব প্রতিপত্তি, এ সবের প্রতি মানুষের আকর্ষণ স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষ যখন এগুলির আসক্তিতে ভালো -মন্দ, ন্যায় অন্যায়ের মাঝে পার্থক্যের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখনই ব্যক্তির জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। সে বৈধ পন্থা ব্যতীত অবৈধ পন্থার স্মরণাপন্ন হয়। অবৈধ পন্থায় সম্পদ সংগ্রহ করা, ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জন করা এবং আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় না করাই হচ্ছে বিকৃত মানসিকতা যা তাকে পাপের পথে টেনে নিয়ে যায়। এই মানসিকতাতে ব্যক্তিগত ভাবে কেউ আক্রান্ত হতে পারে, আবার একটি জাতি জাতিগত ভাবেও আক্রান্ত হতে পারে। [যেমন বাংলাদেশীরা আক্রান্ত ] এরূপ ক্ষেত্রে মানুষ মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পৃথিবীতে বাঁচার জন্য এবং পৃথিবীর অন্যান্য জাতির সাথে প্রতিযোগীতার জন্য ধনসম্পদের, প্রভাব -প্রতিপত্তির, ক্ষমতা লাভের প্রয়োজন আছে সত্য, তবে অবৈধ পন্থায় অর্জন কখনও সুফল বয়ে আনবে না। এর পরেও আল্লাহ্‌ বলেছেন যে, যদি সে অর্জন বৈধ পথেও হয়, তবুও এ সবের জন্য প্রবল আসক্তি মনকে মোহাচ্ছন্ন করে ফেলে, ফলে মনের মাঝে দম্ভ ও অহংকারের জন্ম নেয় এবং প্রবল প্রতিযোগীতার মনোভাব তার সকল চিন্তা ভাবনার রাজ্য দখল করে নেয়। এরূপ ক্ষেত্রে ব্যক্তির সময় থাকে না আল্লাহ্‌র কথা ভাবার বা পরলোকের কথা চিন্তা করার বা আধ্যাত্মিক উন্নতির চেষ্টা করা। এরূপ ক্ষেত্রেই সতর্ক করা হয়েছে ধন -সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তির প্রবল আকাঙ্খার বিরুদ্ধে। এই আকাঙ্খা তীব্র হলে তার থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। আমৃত্যু তাকে এই কামনা ও আসক্তির পিছনে ছুটে বেড়াতে হয়। “সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগীতা তোমাদের অন্যমনস্ক করে রাখে।”

আয়াতঃ ২
এই আয়াতটির অর্থ হচ্ছে মানুষ পার্থিব ধন-সম্পদের পিছনে এতটাই মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে যে মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তেও সে এই নাগপাশ ছিন্ন করতে পারে না, মৃত্যুর সাথে সাথে যখন তাকে কবরে নীত করা হয়, পৃথিবীর সকল আড়ম্বর পূর্ণ জীবন, জাঁকজমক, ক্ষমতা প্রতিপত্তি সকল কিছুই পিছনে ফেলে রেখে যেতে হয়। সঙ্গে কিছুই নিতে পারে না। এই হচ্ছে বাস্তব সত্য। মৃত্যুর পরেই তার সম্মুখে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ধরা পড়বে। তবে কেন মানুষ সময় থাকতে প্রকৃত সত্যকে অনুধাবনের চেষ্টা করে না ?

আয়াতঃ ৩, ৪ ও ৫
তিন ধরণের জ্ঞানের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এই শ্রেণীর প্রথমটি হচ্ছে : নিজস্ব যুক্তি,জ্ঞান, বিবেক,বুদ্ধির দ্বারা বা অন্যের নিকট থেকে শুনে যে জ্ঞান অর্জন করা যায়। একে বলে, “ইলমাল ইয়াক্বীন”। দ্বিতীয় ধরণ হচ্ছে চাক্ষুস দেখে যে জ্ঞান অর্জন করা যায় একে বলে “আইনাল ইয়াক্বীন”। ‘নিশ্চিত জ্ঞান ‘ দ্বারা তৃতীয় ধরণের জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে যাকে বলা হয়েছে “হাক্কুল ইয়াক্বীন” বা নিশ্চিত জ্ঞান যা ভুল ভ্রান্তির উর্দ্ধে।

যে কোন বিষয় সম্বন্ধে পড়াশুনা করে অনুসন্ধান করে যুক্তি তর্কের সাহায্যে চিন্তা করে বিষয়টির সম্বন্ধে ধারণা জন্মে ও ধীরে ধীরে ধারণা স্বচ্ছ ও প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে এবং বিশ্বাসে পরিণত হয়। মানুষের এই স্বাভাবিক প্রবণতাকে গণমাধ্যম যথাঃ রেডিও, টিভি, সংবাদপত্র অনেক সময়েই বিশেষ উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য ব্যবহার করে থাকে। এই উদাহরণটি দেয়া হলো মানুষের মানসিক দক্ষতাসমূহ বুঝানোর জন্য। আল্লাহ্‌ মানুষকে জ্ঞান আহরণের এই বিশেষ দক্ষতাটি দান করেছেন, মানুষ যেনো আল্লাহ্‌র এবাদতকে স্পর্শ থেকে স্পর্শাতীত ; মূর্ত থেকে বিমূর্ত, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য থেকে অতীন্দ্রিয় এবং পার্থিব থেকে স্বর্গীয় লোকে আত্মার উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়। কারণ আধ্যাত্মিক জগত আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে, এক বিমূর্ত জগত। যদি আমরা আমাদের মনকে অতীন্দ্রিয় আধ্যাত্মিক জগতকে অনুভব করার জন্য নির্দ্দেশ দান করি এবং সেভাবেই চিন্তা ও কাজ করি, তাহলেই আমরা মানব জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে অনুধাবনে সক্ষম হব। পৃথিবীর এই জীবনকে অস্থায়ী বস্তুর প্রতি আসক্তিতে ব্যয় না করে উচ্চতর জীবনে উত্তরণের জন্য যা প্রকৃত প্রয়োজন, যা জীবনে স্থায়ী সুখ ও শান্তি বয়ে আনতে পারবে তাতে ব্যয় করা প্রয়োজন। যদি পৃথিবীর জীবনে আমরা আমাদের চিন্তার জগতে ঈমানের বা বিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপন না করি তবে অবশ্যই আমাদের তার প্রতিফল ভোগ করতে হবে।

আয়াতঃ ৬
প্রত্যেক ব্যক্তিকে উহা অর্থাৎ আগুনের মধ্যে দিয়ে বা উপর দিয়ে অতিক্রম করতে হবে।

আয়াতঃ ৭ ও ৮
পৃথিবীর উপভোগের প্রতিটি আনন্দ যা সে ভোগ করেছে সেগুলি সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হবে। যে আনন্দকে সে প্রশয় দান করেছে, হতে পারে তা দম্ভ,গর্ব, মিথ্যা অহংকার যার কোনও মুল্য নাই বা বিকৃত আনন্দ ও পাপ অথবা প্রকৃতপক্ষে এমন বিষয় সে উপভোগ করেছে যা আল্লাহ্‌র বিধান সম্মত, প্রতিটি বিষয়েই তার দায়িত্ব থাকবে এবং এই দায়িত্ব সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হবে। আল্লাহ্‌র হুকুম হচ্ছে সংযত জীবন যাপন করা।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

সূরা আল ইখলাস

সূরা হুমাযাহ এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা ক্বদর এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর