সূরা আ-দিয়াত এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর
সূরা আ-দিয়াত এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর
আরবি উচ্চারন বাংলায় অনেক সময় ভুল থাকে।তাই আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি, যখন বাংলায় উচ্চারন শিখবেন তখন অবশ্যই আরবির সাথে মিলিয়ে নিবেন। আর যদি কেউ আরবি দেখে পড়তে না পারেন তাহলে অবশ্যই অডিও শোনে বাংলার সাথে মিলিয়ে নিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
وَ الۡعٰدِیٰتِ ضَبۡحًا ۙ﴿۱﴾ فَالۡمُوۡرِیٰتِ قَدۡحًا ۙ﴿۲﴾ فَالۡمُغِیۡرٰتِ صُبۡحًا ۙ﴿۳﴾ فَاَثَرۡنَ بِہٖ نَقۡعًا ۙ﴿۴﴾ فَوَسَطۡنَ بِہٖ جَمۡعًا ۙ﴿۵﴾ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لِرَبِّہٖ لَکَنُوۡدٌ ۚ﴿۶﴾ وَ اِنَّہٗ عَلٰی ذٰلِکَ لَشَہِیۡدٌ ۚ﴿۷﴾ وَ اِنَّہٗ لِحُبِّ الۡخَیۡرِ لَشَدِیۡدٌ ؕ﴿۸﴾ اَفَلَا یَعۡلَمُ اِذَا بُعۡثِرَ مَا فِی الۡقُبُوۡرِ ۙ﴿۹﴾ وَ حُصِّلَ مَا فِی الصُّدُوۡرِ ﴿ۙ۱۰﴾ اِنَّ رَبَّہُمۡ بِہِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّخَبِیۡرٌ ٪﴿۱۱﴾
وَ الۡعٰدِیٰتِ ضَبۡحًا ۙ﴿۱﴾ فَالۡمُوۡرِیٰتِ قَدۡحًا ۙ﴿۲﴾ فَالۡمُغِیۡرٰتِ صُبۡحًا ۙ﴿۳﴾ فَاَثَرۡنَ بِہٖ نَقۡعًا ۙ﴿۴﴾ فَوَسَطۡنَ بِہٖ جَمۡعًا ۙ﴿۵﴾ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لِرَبِّہٖ لَکَنُوۡدٌ ۚ﴿۶﴾ وَ اِنَّہٗ عَلٰی ذٰلِکَ لَشَہِیۡدٌ ۚ﴿۷﴾ وَ اِنَّہٗ لِحُبِّ الۡخَیۡرِ لَشَدِیۡدٌ ؕ﴿۸﴾ اَفَلَا یَعۡلَمُ اِذَا بُعۡثِرَ مَا فِی الۡقُبُوۡرِ ۙ﴿۹﴾ وَ حُصِّلَ مَا فِی الصُّدُوۡرِ ﴿ۙ۱۰﴾ اِنَّ رَبَّہُمۡ بِہِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّخَبِیۡرٌ ٪﴿۱۱﴾
বাংলা উচ্চারণঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অল আদিয়াতি দাবহান ফালমূরিয়াতি ক্বাদহান। ফালমুগিরাতি ছুবহান ফা'আছারনা বিহী নাক্ব'আন। ফাওয়াছাতনা বিহী জাম'আন। ইন্নাল ইনসানা লিরাব্বিহী লাকানুদ। অইন্নাহু আলা যা'লিকা লাশাহীদ। অইন্নাহু লিহুব্বিল খাইরি লাশাদীদ। আফালা ইয়ালামু ইযা বু'ছিরা মা ফিল কুবুরি অহুছছিলা মাফিছ ছুদুরি। ইন্না রাব্বাহুম বিহিম ইয়াওমায়িযিল লাখাবীর।
বাংলা অর্থঃ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
কসম সেই অশ্বের যখন সে হাঁফাতে হাঁফাতে দৌড়ায়, পরে স্ফুলিঙ্গ ছড়ায়, প্রভাতকালে আক্রমণ করে, তখন তা ধূলি উড়ায়, অতঃপর শত্রুব্যুহের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। নিশ্চই মানুষ তার রবের অকৃতজ্ঞ। আর নিশ্চই এটা তার নিজেরই জানা। আর সে ধন সম্পদকে বেশি বেশি ভালবাসে। তার কি সেই সময়টি জান নেই, যখন কবরবাসী উথিত হবে? অন্তরে যা আছে তা প্রকাশিত হবে? তাদের ব্যাপারে তাদের রব সে দিন ভালভাবে জানাবেন।
কসম সেই অশ্বের যখন সে হাঁফাতে হাঁফাতে দৌড়ায়, পরে স্ফুলিঙ্গ ছড়ায়, প্রভাতকালে আক্রমণ করে, তখন তা ধূলি উড়ায়, অতঃপর শত্রুব্যুহের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। নিশ্চই মানুষ তার রবের অকৃতজ্ঞ। আর নিশ্চই এটা তার নিজেরই জানা। আর সে ধন সম্পদকে বেশি বেশি ভালবাসে। তার কি সেই সময়টি জান নেই, যখন কবরবাসী উথিত হবে? অন্তরে যা আছে তা প্রকাশিত হবে? তাদের ব্যাপারে তাদের রব সে দিন ভালভাবে জানাবেন।
তাফসীরঃ
আয়াতঃ ১
এই শপথের ব্যাখ্যা তিন ভাবে করা সম্ভবঃ
১) যুদ্ধ ক্ষেত্রে ধাবমান অশ্বরাজির দিকে দৃষ্টিপাত করতে বলা হয়েছে। এসব অশ্বরাজি তাদের প্রভুর আদেশে প্রভাতে যুদ্ধক্ষেত্রে অভিযান করে। এভাবেই তারা শত্রুকে দিনের আলোর সুযোগ দান করে। এ সব অশ্বরাজি শত্রুর অস্ত্র এবং ব্যুহ ভেদ করে বীরদর্পে তাদের মাঝে ঢুকে পড়ে তারা অকুতোভয়, তারা তাদের জীবনের ভয় করে না। তাদের নিকট প্রভুর আদেশ পালনই হচ্ছে সর্বোচ্চ কর্তব্যকর্ম। অকৃতজ্ঞ মানুষ কি কখনও আল্লাহ্র প্রতি ততটুকু বিশ্বস্ততা প্রদর্শন করে ? না; বরং সে আল্লাহ্র প্রতি অকৃতজ্ঞ। মানুষের কর্ম-ই প্রমাণ করে যে, সে আল্লাহ্ অপেক্ষা ধন সম্পদ অধিক পছন্দ করে। পার্থিব সম্পদের লাভ তা চিরস্থায়ী লাভ নয়।
২) যুদ্ধের অশ্বরাজীর ন্যায় সেই সব সাহসী মানুষ যারা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বস্ততার জন্য সংহত হয় এবং সংগ্রাম করে এদেরই বিপরীত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাপুরুষ মানুষ যারা তুচ্ছ এবং অকৃতজ্ঞ।
৩) যুদ্ধ, সংঘর্ষ এবং বিজয় সব কিছু তুলনীয় আধ্যাত্মিক জগতের সাথে। আধ্যাত্মিক জগতের এই যুদ্ধ এবং বিজয় হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যারা সম্পূর্ণ রূপে পাপে নিমজ্জিত।
আয়াতঃ ২
‘ক্ষুরাঘাতে ” অর্থাৎ দ্রুত ধাবমান অশ্বরাজির ক্ষুরের আঘাতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছোটে। যদি আমরা ধারণা করি যে, অশ্বরাজির সারিবদ্ধ দৌড় শুরু হয় রাত্রির শেষ প্রহরে যেনো প্রভাতে তারা যুদ্ধ ক্ষেত্রে পৌঁছাতে সক্ষম হয়; তবে সে ক্ষেত্রে রাত্রির অন্ধকারে তাদের ক্ষুরাঘাতের অগ্নি স্ফুলিঙ্গ দৃশ্যমান হবে।
আয়াতঃ ৩
বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, আক্রমণটি হবে প্রভাতে। কারণ কাপুরুষের ন্যায় রাতের আঁধারে শত্রুকে আক্রমণ করা নয়। বীরত্ব ও পৌরুষ হচ্ছে শ্রেষ্ঠত্বের লক্ষণ। দিনের আলো সত্বেও শত্রুরা পরাজিত হবে, তা শুধুমাত্র আল্লাহ্র সৈনিকদের তেজ,শক্তি,ও নির্ভীক মনোবলের জন্যই নয়, কারণ শত্রুরা হবে অলস এবং যুদ্ধের জন্য অপ্রস্তুত।
আয়াতঃ ৪
‘ধূলির ঝড় উত্থিত করে ‘ বাক্যটি রূপকধর্মী। দ্রুতগামী অশ্বের ক্ষুরের ধূলায় ঝড়ের সৃষ্টি হয় যাতে দৃষ্টি ব্যহত হয়। ঠিক সেরূপ হচ্ছে তাদের অবস্থা যারা আল্লাহ্র সত্যকে প্রতিহত করে, তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে,তাদের স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি লোপ পায়। ধূলির ন্যায় অজ্ঞতা ও হতবুদ্ধি অবস্থা তাদের স্বাভাবিক বুদ্ধিকে ঢেকে দেয়।
আয়াতঃ ৫
যে গতিতে অশ্ব শত্রু বুহ্যের মধ্যে ঢুকে পড়ে তা এখানে রূপক বর্ণনাহিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। মন্দ ও পাপের সম্মিলিত শক্তি যতই চেষ্টা করুক – তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই তাদের দ্রুত ধ্বংসের কারণ হবে। আমাদের চারিপার্শ্বের প্রতিদিনের জীবনে এরূপ বহু উদাহরণ প্রতিদিন ঘটে থাকে। অপরাধীরা অপরাধের চরম শিখরে পৌছানোর পরে তাদের নিজস্ব কর্মেই তারা নিজেরা ধ্বংস হয়।
আয়াতঃ ৬
যে সব ব্যক্তি আল্লাহ্র নির্দ্দেশিত পথে চলেন এবং অসত্য, অন্যায় ও পাপের বিরুদ্ধে বিরামহীন ভাবে সংগ্রাম করেন তাদের বিপরীত বৈষম্য সে সব মানুষ যারা তাদের প্রতিপালক আল্লাহ্র নিকট অকৃতজ্ঞ। যে আল্লাহ্ তাঁকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে প্রতিপালন করেন এবং তার কল্যাণের জন্য অনুগ্রহ দান করেন – তাঁকেই সে ভুলে যায়। তাদের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায় তাদের চিন্তায়, কথায় এবং কাজে। তারা হয় আল্লাহকে সম্পূর্ণ ভুলে থাকে, নয়তো আল্লাহ্র অনুগ্রহের অপব্যবহার দ্বারা অনুগ্রহকে অস্বীকার করে অথবা আল্লাহ্র সৃষ্টির প্রতি অত্যাচার ও অবিচার দ্বারা তাদের আল্লাহ্র প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে। এসব লোক যুদ্ধক্ষেত্রের অশ্বের থেকেও অধম, কারণ অশ্ব এই জীবন বিপন্ন করে প্রভুর আদেশ পালন করে থাকে।
আয়াতঃ ৭
মানুষ তার কার্যবলীর দ্বারা প্রমাণ করে যে সে আল্লাহ্র প্রতি কৃত অঙ্গীকারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে।
আয়াতঃ ৮
মানুষের ধন-সম্পত্তির প্রতি আসক্তি প্রবল। হায়রে ! নির্বোধ মানুষ, অস্থায়ী পার্থিব সম্পদের জন্য সে আল্লাহ্র শুভাশীষের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। ধন -সম্পদের আসক্তি মানুষকে পার্থিব দুনিয়ার উর্দ্ধে চিন্তা করার সুযোগ দান করে না। আধ্যাত্মিক জগতের দ্বার তার জন্য অবরুদ্ধ থেকে যায়। সে হয় অকৃতজ্ঞ।
আয়াতঃ ৯ ও ১০
“কবরে যাহা আছে ” – কবর হচ্ছে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার প্রতীক। মৃতদেহ, গোপন ষড়যন্ত্র, মন্দ চিন্তা এবং কল্পনা, যা দীর্ঘকাল লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে; শেষের সে দিনে কোন কিছুই আর লুকিয়ে রাখা যাবে না। সব কিছুই বিচারের জন্য আল্লাহ্র সম্মুখীন করা হবে। মানুষ বহু কিছুই ভুলে যায় – সেদিন সব ভুলে যাওয়া কথা ও কাজ সবই সুস্পষ্ট রূপে ধরা পড়বে।
আয়াতঃ ১১
আল্লাহ্র জ্ঞান সব কিছুকেই পরিবেষ্টিত করে আছে। মানুষের অন্তরের সকল গোপনীয়তা, ভুলে যাওয়া সকল কথা ও কাজ সব কিছু আল্লাহ্র নিকট আমলনামায় রক্ষিত আছে। এ সব কিছুই বিচার দিবসে প্রকাশ করা হবে।
Comments
Post a Comment