সূরা ফালাক্ব এর আরবি, বাংল উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা ফালাক্ব এর আরবি, বাংল উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর 

আরবি উচ্চারন বাংলায় অনেক সময় ভুল থাকে।তাই আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি, যখন বাংলায় উচ্চারন শিখবেন তখন অবশ্যই আরবির সাথে মিলিয়ে নিবেন। আর যদি কেউ আরবি দেখে পড়তে না পারেন তাহলে অবশ্যই অডিও শোনে বাংলার সাথে মিলিয়ে নিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ الۡفَلَقِ ۙ﴿۱﴾ مِنۡ شَرِّ مَا خَلَقَ ۙ﴿۲﴾ وَ مِنۡ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ ۙ﴿۳﴾ وَ مِنۡ شَرِّ النَّفّٰثٰتِ فِی الۡعُقَدِ ۙ﴿۴﴾ وَ مِنۡ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ ٪﴿۵﴾

বাংলা উচ্চারণঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কুল আ'উযু বিরাব্বিল ফালাক্বি। মিন শাররি মা খালাক্ব। অমিন শাররি গা সিক্বিন ইযা অক্বাব। অমিন শাররি ন্নাফফা ছাতি ফিল 'উক্বাদ। অমিন শাররি হা-সিদিন ইযা হাসাদ।

বাংলা অর্থঃ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
(হে মুহাম্মদ!) আপনি বলে দিন, আশ্রয় চাই উষার রবের, তার সৃষ্টির অনিষ্ট হতে, অন্ধকার রাতের অনিষ্ট হতে যখন তা হয় গভীর, আর গিরায় ফুঁ দান কারিণীর অনিষ্ট হতে, আর হিংসাকারীর হিংসার অনিষ্ট হতে।

তাফসীরঃ

আয়াতঃ ১

আল্লাহ্‌র সৃষ্টি জগতে ভালো ও মন্দ এই দ্বিবিধ শক্তির ধারা পাশাপাশি বিরাজমান। ভালো ও কল্যাণের শক্তিকে আলোর সাথে তুলনীয়, অপর পক্ষে মন্দ বা অমঙ্গলের শক্তিকে অন্ধকারের সাথে তুলনীয়। গভীর রাত্রির অন্ধকার যেরূপ ঊষার আগমনে বিদূরীত হয়, ঠিক সেরূপ অমঙ্গলের অন্ধকার বিদীর্ণ করে মঙ্গলের আলোক রশ্মী বিচ্ছুরিত করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ্‌র। সুতারাং আমাদের ভয়ের কিছুই নাই যদি আমরা সেই মহাশক্তিধর প্রভুর স্মরণাপন্ন হতে পারি।

‘ফালাক’ – অর্থ ঊষা, ভোর, দিনের প্রথম সূচনা, রাত্রির অন্ধকারকে বিদীর্ণ করে প্রথম আলোক রেখার বিচ্ছুরণ। এই উপমাটির দ্বারা বিভিন্ন অর্থকে বুঝানো হয়ঃ

১) সুদীর্ঘ রাত্রি শেষে ; রাত্রির অন্ধকার বিদীর্ণ হয় প্রথম আলোর রশ্মী ঊষার আগমন ঘোষণা করে।

২) অজ্ঞতার অন্ধকার যখন সমগ্র আত্মাকে আচ্ছাদিত করে ফেলে, আল্লাহ্‌র হেদায়েতের আলো তখন সেই সূচীভেদ্য অন্ধকারকে বিদীর্ণ করে আত্মাকে আলোকিত করে।

৩) অন্ধকার অস্থায়ী। কর্মচঞ্চল জীবনকে আলোর প্রতীক হিসেবে কল্পনা করা যায়। আর এই জীবনের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আল্লাহ্‌র হেদায়েতের আলো।

“ঊষার আলোর প্রভু” ‘ বাক্যটি দ্বারা আল্লাহ্‌র হেদায়েতের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডলীকে তুলে ধরা হয়েছে। যদি আমরা আমাদের সর্ব অস্তিত্বের জন্য, বিপদ বিপর্যয়ে শুধুমাত্র এক আল্লাহ্‌র শরণাপন্ন হই, তবে আমাদের সকল অজ্ঞতা, দূর হয়ে যাবে এবং আমরা কুসংস্কার ও সকল অমঙ্গলের ভয় থেকে মুক্ত থাকতে পারবো ; ঠিক সেই ভাবে যে ভাবে পৃথিবী ঊষার আলোক দ্বারা রাত্রির অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়।

আয়াতঃ ২

আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস আমাদের সর্ব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে, সকল বিপদ থেকে মুক্ত রাখবে, সকল অকল্যাণ থেকে নিরাপদ রাখবে। পৃথিবীর জীবনে সাধারণভাবে আমরা যে সব বিপদ ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হই সেগুলিকে তিনটি শ্রেণীতে নিচের আয়াত সমূহে শ্রেণীভূক্ত করা হয়েছে :

১) প্রত্যক্ষ অনিষ্ট ও বিপদ যা দ্বারা মানুষ সরাসরি কষ্ট পায়। একেই সূচিত করা হয়েছে ‘রাত্রির’ দ্বারা যখন তা গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয় কারণ রাত্রি যখন গভীর হয় তখনই ক্ষতির সম্ভাবনা বেশী হয়। অর্থাৎ অপরাধ জগৎ দ্বারা।

২) ‘মুসীবত’ বা বিপর্যয় এটার কারণ অনেক সময়ে দৃষ্টিগোচর হয় না ; একে সূচিত করা হয়েছে “যারা গ্রন্থিতে ফুৎকার দেয়” বাক্যটি দ্বারা। এর দ্বারা যাদু-টোনাকে বুঝানো হয় -যে ক্ষতি ক্ষতিগ্রস্থদের অগোচরে ঘটে থাকে। বৃহত্তর অর্থে বুঝানো হয়েছে সেই সব বিপর্যয় যা ব্যক্তির নিজস্ব ক্ষমতার বাইরে যেমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

৩) হিংসুকের হিংসার আগুন থেকে আল্লাহ্‌র আশ্রয় চাওয়া হয়েছে।

আয়াতঃ ৩

রাত্রি যখন গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়, সেই অন্ধকারের মাঝে নিহিত থাকে অপরাধ জগতের বিস্তার ও বিভিন্ন বিপদের সম্ভাবনা। অনেক লোক আছে যারা নিশিত রাত্রির গভীর অন্ধকারকে ভয় পায়, তবে সব লোকই অন্ধকারে যে অপরাধ জগত বিস্তার লাভ করে তার ক্ষতি ও বিপদ বিপর্যয়কে ভয় পায়। আমাদের এই আয়াতে বলা হয়েছে আমাদের ভয় পাওয়ার কারণ নাই। অন্ধকারের ক্ষতি থেকে রক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আল্লাহ্‌র আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। যে আশ্রয় আমাদের সর্বপ্রকার ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে।

আয়াতঃ ৪
“গ্রন্থিতে ফুৎকার দেয় ” বাক্যটি দ্বারা যারা যাদু টোনা করে সেই সব ডাইনীদের বুঝানো হয়েছে। যাদু টোনার প্রভাব হচ্ছে মনোজগতের উপরে। তবে এর অর্থ সীমাবদ্ধভাবে গ্রহণ না করে ব্যপক অর্থে গ্রহণ করা উচিত। জীবনের কর্মক্ষেত্রে যে বস্তুসমূহ বা ঘটনা সমূহ আমাদের মনোজগতের বিপর্যয় সৃষ্টি করে, যার ফলে আমরা বিপথে পরিচালিত হই এবং মনোজগতের শান্তি নষ্ট করি, ব্যপক অর্থে তা সবই হচ্ছে “গ্রন্থিতে ফুৎকারের” ন্যায় ক্ষতিকর। এগুলি হতে পারে অপরের গোপন ষড়যন্ত্র, মানসিক অত্যাচার, বিলাস ব্যসনের সামগ্রীর সম্মোহনী শক্তি অথবা মিথ্যা গুজব বা চরিত্র হননকারী কুৎসা ইত্যাদি বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ যা মানুষকে সঠিক রাস্তায় চলতে বাঁধার সৃষ্টি করে অথবা মানসিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। ফলে তাঁর অন্তরের প্রশান্তি নষ্ট হয়। জীবনের চলার পথে এরূপ বহু ঘটনা থাকে যা আমাদের চিন্তার জগতকে অধিকার করে মানসিক বিপর্যয় ঘটায়। এরূপ ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র সাহায্য প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে।

আয়াতঃ ৫
হিংসা রীপুকে আগুনের সাথে তুলনা করা হয়। হিংসুক ব্যক্তি যাকে হিংসা করে তার ধ্বংস কামনা করে ঠিক সেই ভাবে, যেভাবে আগুন কোন জিনিষকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। সে ক্ষেত্রে হিংসুকের অন্তর থাকে যৎপরনাস্তি বিদ্বেষে ও ঈর্ষাতে পরিপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে এই হিংসার দাবানল থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে আল্লাহ্‌র নিরাপদ আশ্রয়।

Comments

Popular posts from this blog

সূরা হুমাযাহ এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা ক্বদর এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা আল ইখলাস