সূরা যিলযাল এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা যিলযাল এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর


আরবি উচ্চারন বাংলায় অনেক সময় ভুল থাকে।তাই আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি, যখন বাংলায় উচ্চারন শিখবেন তখন অবশ্যই আরবির সাথে মিলিয়ে নিবেন। আর যদি কেউ আরবি দেখে পড়তে না পারেন তাহলে অবশ্যই অডিও শোনে বাংলার সাথে মিলিয়ে নিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
اِذَا زُلۡزِلَتِ الۡاَرۡضُ زِلۡزَالَہَا ۙ﴿۱﴾ وَ اَخۡرَجَتِ الۡاَرۡضُ اَثۡقَالَہَا ۙ﴿۲﴾ وَ قَالَ الۡاِنۡسَانُ مَا لَہَا ۚ﴿۳﴾ یَوۡمَئِذٍ تُحَدِّثُ اَخۡبَارَہَا ۙ﴿۴﴾ بِاَنَّ رَبَّکَ اَوۡحٰی لَہَا ؕ﴿۵﴾ یَوۡمَئِذٍ یَّصۡدُرُ النَّاسُ اَشۡتَاتًا ۬ۙ لِّیُرَوۡا اَعۡمَالَہُمۡ ؕ﴿۶﴾ فَمَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ خَیۡرًا یَّرَہٗ ؕ﴿۷﴾ وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ شَرًّا یَّرَہٗ ٪﴿۸﴾

বাংলা উচ্চারণঃ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইযা যুলযিলাতিল আরদু যিলযালাহা। অআখরাজাতিল আরদু আছকালাহা। অকালাল ইনছানু মালাহা। ইয়াওমায়িযিন তুহাদ্দিছু আখবারাহা। বিআন্না রাব্বাকা আওহালাহা। ইয়াওমাইয়িযিই ইয়াছদুরু ন্নাসু আশতাতাল লিইয়ুরাও আ'মা লাহুম। ফামাই ইয়া'মাল মিছকালা যাররাতিন খাইরাই ইয়ারাহ। অমাই ইয়া'মাল মিছকালা যাররাতিন শাররাই ইয়ারাহ।
বাংলা অর্থঃ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
পৃথিবীকে যখন ভীষণভাবে প্রকম্পিত করা হবে, যখন ভুমি তার বোঝা বের করে দিবে, আর তখন লোকেরা বলবে, তার কি হল? সে দিন তার সকল খবর বলবে। তা একারণে যে, তার রব তাঁকে এরূপ আদেশই দিবেন। মানুষ সে দিন দলে দলে বিভক্ত হয়ে বের হবে, যাতে নিজের আমলের প্রতিফলন দেখতে পায়। আতঃপর অণু পরিমাণ নেক আমলকারীও তা আবলোকন করতে পারবে, আর অণু পরিমাণ বদ কাজ করলেও তা দেখতে পাবে।

তাফসীরঃ

আয়াতঃ ১
সাধারণ মানুষের নিকট প্রচন্ড ভূমিকম্প এক অত্যন্ত ভয়াবহ ঘটনা। এর ফলে সুউচ্চ প্রাসাদ মূহুর্তের মধ্যে ধূলিস্যাৎ হয়ে পড়ে। পৃথিবীর বর্হিভাগ চৌচির হয়ে ফেটে পড়ে ও অভ্যন্তর ভাগের বিভিন্ন পদার্থ বের হয়ে আসে। ভুমিকম্পের আকস্মিকতা, উৎপত্তি, মানুষের অজানা এবং এর ধ্বংস করার ক্ষমতার ভয়াবহতা মানুষকে ভয়ে বিহ্বল করে দেয়। এ হলো পৃথিবীর সামান্য ভূমিকম্পের বিবরণ। কিন্তু কেয়ামতে যে ভুকম্পন হবে তার তীব্রতা ও ধ্বংসযজ্ঞ কল্পনা করাও মানুষের পক্ষে অসাধ্য। তবে পৃথিবীর সামান্য ভূমিকম্পন থেকে মানুষ কেয়ামতের দিনের ভূকম্পনের সামান্য কিছু ধারণা করতে পারে।

আয়াতঃ ২
যদি ভূকম্পনের সাথে আগ্নেগিরির আগ্নেয়পাত ঘটে, তবে বড় বড় শিলাখন্ড ও গলিত উত্তপ্ত লাভার স্রোত ভূগর্ভ থেকে উৎক্ষিপ্ত হতে থাকে। এগুলির উৎক্ষেপন থেকে মনে হয় যে, এগুলি বের করে দেয়ার জন্য পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ ব্যগ্র, এরা হচ্ছে পৃথিবীর জন্য বোঝা স্বরূপ। যাবতীয় খনিজ পদার্থ, অথবা ধনরত্ন যা মানুষ গোপনে পুঁতে রেখেছিলো সব কিছু মাটির অতল থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু কেয়ামতে যে প্রচন্ড ভূকম্পন ঘটবে তাতে পৃথিবীতে অদ্যাবধি যত মৃতদেহকে কবর দেয়া হয়েছে, সব বের হয়ে আসবে এবং তাদেরকে কবরের অন্ধকার থেকে দিনের আলোতে প্রকাশ করা হবে। প্রকৃত সত্যের ভিত্তিতে তাদের বিচার অনুষ্ঠিত হবে।

আয়াতঃ ৩
সেদিনের ভয়াবহতা দর্শনে মানুষ হয়ে পড়বে হতভম্ব। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় তার কণ্ঠরোধ হওয়ার অবস্থা হবে।

আয়াতঃ ৪ ও ৫
এই আয়াতে বলা হয়েছে পৃথিবীকে সেদিন ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত করা হবে। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে সত্যি তবে পৃথিবীতে সৃষ্টির আদি থেকে যত কাজ করা হয়েছে সব কিছু পৃথিবী প্রকাশ করে দেবে দিবালোকের ন্যায়। কারণ আল্লাহ্‌ পৃথিবীকে সেই আদেশ দান করবেন যার ফলে পৃথিবীর মাঝে নিজেকে প্রকাশ করার ‘প্রেরণা’ জন্মলাভ করবে। তাকে হুকুম করা হবে সকল প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করার জন্য। আল্লাহ্‌, ‘ প্রেরণা ‘ দান করলে ভাষাহীন জীবও আত্মপ্রকাশের ক্ষমতা রাখে।

আয়াতঃ ৬
এই পৃথিবীতে ভালো ও মন্দ পরস্পর মিশে থাকে। কিন্তু বিচার দিবসের প্রাক্কালে ভালোকে মন্দ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করা হবে। ভালোরা হবে এক শ্রেণী এবং মন্দরা হবে অন্য শ্রেণী। প্রত্যেক দল তাদের বিচারের জন্য অপেক্ষা করবে। প্রত্যেক দলকে তাদের কৃতকর্মকে দেখানো হবে, পৃথিবীতে তারা যা করেছে, যা চিন্তা করেছে, যা বলেছে অর্থাৎ জীবনের খুঁটিনাটি প্রতিটি ঘটনা সবই সিনেমার মত তাদের দৃষ্টিতে ভাস্বর হবে। তাদের কোন গোপন কাজ বা চিন্তা সেদিন গোপন থাকবে না। প্রতিটি কাজ চিন্তা, কথা, আচরণ তা প্রকাশ্য হোক বা অপ্রকাশ্য হোক সব কিছুর হিসাব নেয়া হবে। সেই সাথে এ কথাও বলা হয়েছে তাদের কাজের হিসাব তাদের দেখানো হবে।

আয়াতঃ ৭ ও ৮
‘যাররাত’ পরমাণু সম ওজন। অর্থাৎ পৃথিবীতে আমরা যাকে সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র ওজন মনে করি। বলা হয়েছে যে ভালো বা মন্দ যাই-ই মানুষ এই পৃথিবীতে করবে তা সেদিন সে দেখতে পারবে ও স্মরণ করতে পারবে। ভালো কাজের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য বলা হয়েছে যে, অণু সমান সৎ কাজ করলেও আল্লাহ্‌র নিকট তা হারিয়ে যাবে না। এ ভাবেই আল্লাহ্‌ সৎকর্মশীলদের পুরষ্কৃত করবেন।

Comments

  1. সুবহানাল্লাহ☺

    ReplyDelete
  2. মাশাআল্লাহ

    ReplyDelete
  3. Alhamdulillah

    ReplyDelete
  4. অবশ্যই এগুলো আমল করা প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরয এবং তা পালনে আমরা সবাই স্বচেষ্ট থাকব। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুতি মতে সফলকাম হতে পারব, ইনশাল্লাহ।

    ReplyDelete
  5. মাশআল্লাহ

    ReplyDelete
  6. আরবিতে লিখা তুহাদ্দাছু,র বাংলাতে লেখা তুহাদ্দিছু..৪নং আয়াত।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

সূরা আল ইখলাস

সূরা হুমাযাহ এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর

সূরা ক্বদর এর আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং তাফসীর