চিত্রসহ ওযুর নিয়ম
চিত্রসহ ওযুর নিয়ম
তাহারাত বলতে শরীর, কাপড় এবং নামাযের স্থান সবগুলোর পবিত্রতাকেই বুঝায়।
শরীরের পবিত্রতা দুইভাবে হয়:
শরীরের পবিত্রতা দুইভাবে হয়:
প্রথমত: হাদসে আকবর বা বড় নাপাকী থেকে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন, বড় নাপাকী স্বামী-স্ত্রীর মিলন অথাব অন্য কোন কারণে বীর্যস্খলন কিংবা হায়েয-নেফাসের কারণে হয়ে থাকে, তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে চুলসহ শরীরের সর্বাঙ্গে পানি বয়ে দেয়ার মাধ্যমে এ গোসল সম্পন্ন হয়।
দ্বিতীয়তঃ ওযুঃ এ বিষয়ে আল্লাহ বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فاغْسِلُواْ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُواْ بِرُؤُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَينِ
অর্থ: “হে মুমিনগণ! তোমরা যখন নামাযে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)”। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত: ৬)
উক্ত আয়াতে এমন কয়েকটি কার্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যেগুলো ওযু করাকালীন সম্পাদন করা অত্যাবশ্যক। আর তা হল:
১। মুখমণ্ডল ধৌত করা। এর মধ্যে কুলি করা এবং নাকে পানি দিয়ে নাক পরিস্কার করাও অন্তর্ভুক্ত।
২। কনুইসহ দুই হাত ধৌত করা।
৩। সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা। আর সম্পূর্ণ মাথা বলতে দুই কানও অন্তর্ভুক্ত।
৪। দুই পায়ের গিরাসহ ধৌত করা।
কাপড় ও নামাযের স্থানের তাহারাতের অর্থ হলো পেশাব, পায়খানা এবং এ জাতীয় অন্যান্য অপবিত্র বস্তু থেকে পবিত্র হওয়া।

১. “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম-আমি নামাযের উদ্দেশে পবিত্রতা লাভের উদ্দেশে ও আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে ওযু করিতেছি” বলে প্রথমে দুই হাতের কবজি পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। প্রথমে ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কবজি পর্যন্ত তিনবার এবং এরপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হবে।
২. ডান হাতে পানি নিয়ে তা মুখে দিয়ে ভাল্ মত কুলি করতে হবে। এভাবে তিনবার, যেন কোন প্রকার খাদ্যকণা মুখের ভিতর না থাকে। [রোজা থাকা অবস্থায়ও এটাই করতে হবে, তবে অনেক হুঁশিয়ার থাকতে হবে যেন পানি পেটে না যায়]
৩. ডান হাতে পানি নিয়ে নাকে পানি দিয়ে বাম হাতের বৃদ্ধাংগুলি,আর কনিষ্ঠাংগুলি দ্বারা নাকের ভিতর পরিষ্কার করতে হবে।
এমনভাবে পানি প্রবেশ করাতে হবে যেন নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছায়। নাকের ভিতর কিছু থাকলে নাক ঝাড়তে হবে। এভাবে তিনবার। প্রতিবারই পরিষ্কার পানি দিতে হবে নাকে।
এমনভাবে পানি প্রবেশ করাতে হবে যেন নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছায়। নাকের ভিতর কিছু থাকলে নাক ঝাড়তে হবে। এভাবে তিনবার। প্রতিবারই পরিষ্কার পানি দিতে হবে নাকে।
৪. এবারে মুখমন্ডল অর্থাৎ কপালের উপরে যেখান থেকে স্বাভাবিকভাবে মাথার চুল গজায় সেখান থেকে নিচের থুতনির নীচ পর্যন্ত এবং
এক কানের লতি থেকে আরেক কানের লতি পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থান, পানি দিয়ে তিনবার ধৌত করতে হবে। দাঁড়ি থাকলে তা খিলাল করতে হবে। যেন দাঁড়ি পরিষ্কার হয় এবং সম্ভব হলে দাঁড়ির গোড়ায় পানি পৌঁছায় (পাতলা দাঁড়ির ক্ষেত্রে). গোঁফের খেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এভাবে তিনবার করতে হবে।
এক কানের লতি থেকে আরেক কানের লতি পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থান, পানি দিয়ে তিনবার ধৌত করতে হবে। দাঁড়ি থাকলে তা খিলাল করতে হবে। যেন দাঁড়ি পরিষ্কার হয় এবং সম্ভব হলে দাঁড়ির গোড়ায় পানি পৌঁছায় (পাতলা দাঁড়ির ক্ষেত্রে). গোঁফের খেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এভাবে তিনবার করতে হবে।
৫. এবারে বাম হাত দিয়ে পানি দ্বারা ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ভালভাবে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর একি ভাবে ডান হাত দিয়ে বাম হাতও পরিষ্কার করতে হবে। কারো হাতে আংটি থাকলে দেখতে হবে আংটির নিচেও যেন পানি প্রবেশ করে। নখেও যেন কোন ময়লা না থাকে।
৬. মাথা মাসেহ করাটা একটু খেয়াল করে করতে হবে। উপরের ছবির মত করে বৃদ্ধাংগুলি আর শাহাদাত আংগুলি আলাদা রেখে দুই হাত দিয়ে কপালে চুল শুরু হবার জায়গা থেকে পিছনে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করতে হবে। তারপর একই ভাবে হাত উল্টিয়ে মাথার তিন-চতুর্থাংশ পিছন থেকে সামনে মাসেহ করতে হবে। এবারে শাহাদাত আংগুলি দ্বারা কানের ভিতরের অংশ আর বৃদ্ধাংগুলি দ্বারা কানের বাইরের অংশ পরিষ্কার করতে হবে। এরপর হাতের পিছনের অংশ দিয়ে ঘাড় মাসেহ করতে হবে।
৭. এরপর ডান হাত দিয়ে পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে ডান পা টাখনু বা গোঁড়ালি পর্যন্ত ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে এমনভাবে যেন আংগুলের ভিতরও কোন ময়লা না থাকে। প্রথমে ডান পায়ের কনিষ্ঠ আংগুল থেকে খিলাল করতে হবে, বাম পা এর ক্ষেত্রে বৃদ্ধাংগুলি থেকে শুরু করতে হবে। এভাবে তিনবার।
ওযু শেষ হবার পর নিচের দু’আ পড়তে হবে-
أَََشْهَدُ أَنْ لا إلَه إِلّا الله وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ
”আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু-লা-শারীকা লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু-ওয়া রাসূলুহু।”
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল।
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল।
প্রিয় বন্ধুরা! অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পোষ্ট। অযুর গুরুত্ব অনেক, কিন্তু আমরা অনেকেই অযুর সঠিক নিয়ম জানি না, জানতে চেষ্টাও করি না।
Comments
Post a Comment